Header Ads Widget

মানব জীবনে সময়ের গুরুত্ব|

 মানব জীবনে সময়ের গুরুত্ব।

Taken from:Wikipedia.

"ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে Time is all the best of money অর্থাৎ সময়-ই হচ্ছে সব সম্পদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ"।

আমাদের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান ও অতিপ্রয়োজনীয় সম্পদ হচ্ছে সময়। সময়ের ওপর ভর করেই জীবনের উন্নতি তরান্বিত হয় থাকে এবং সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে জীবনের অবনতি(ক্ষতি সাধিত) হয়। মানব জীবনের সীমাবদ্ধ গণ্ডিকে সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে সময় একমাত্র উপজীব্য। সময় জ্ঞান না থাকলে জীবনে কখনও উন্নতির আশা পূরণ হয় না। পক্ষান্তরে সময়ই মানব জীবনের উন্নতি-অবনতি, সুখ-সমৃদ্ধি ও প্রতিপত্তি অর্জনের শ্রেষ্ঠ উপাদেয়। জীবনের গতি সময়ের গতির মতোই নির্মম। কারণ, জীবন বয়সের ফ্রেমে বাঁধা। তাই জীবনের কোনো মূল্য নেই, কিন্তু মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে সময়টুকু থাকে, তাকে যিনি যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন, প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন, কেবল তার জীবনই মূল্যবান। এবি অলকট বলেছেন, জ্ঞানী হয়ে মানুষ জন্মগ্রহণ করে না, সময় মানুষকে পরিপক্বতা দান করে।


সময়ের গুরুত্ব দাও, নচেৎ গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে/

 সময়ের ফ্রেমে বন্ধ হয়ে ঘুরছে পৃথিবী । চলছে মানুষ।  সময়ের মাঝে নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত পৃথিবী ও মানুষ। সময় কালের সাক্ষি ও প্রমাণ। ইতিহাসের প্রমাণ। সময়কে কেন্দ্র করে দুনিয়ায় ঘটেছে অসংখ্য ঘটনা। রচিত হয়েছে সুখ,দুঃখ,আনন্দ,বেদনা,সফলতা ও ব্যর্থতার কাহিনী। সব কিছুর মূলে রয়েছে সময়। সময়কে সঠিক সময়ে ধারণ করতে পারলে জীবন হবে মধুময়। সময়কে আপনার সঙ্গে মিলিয়ে কাজে লাগাতে পারলে জীবন হবে ছন্দময় ও সুখময়।
সময় সাধিত করে বিপ্লব। অসাধ্যকে করে সাধন। মানুষকে সফল হতে হলে গুরুত্ব দিতে হবে সময়কে। কদর করতে হবে প্রতিটি ওয়াক্তকে। সময় স্পর্শকাতর পদার্থ। নদীর স্রোতের মতো প্রবাহমান। তার গতি আপন হাওয়াই চলমান। সে কারো জন্য অপেক্ষার ফুরসত দেখায় না। সুতরাং সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে জীবনের মতো। সময়ের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে জগতের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ বলেন- “কসম সময়ের। সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে হকের দাওয়াত দেয় ও ধৈর্য ধরার উপদেশ দেয়”। (সূরা আসর ১-৪)।
মানব জীবনের জন্য সময় হলো অনেক বড় নেয়ামত। যে নিয়ামতের পরিধি বিস্তৃত ও সীমাহীণ। যে নিয়ামতকে আঁকড়ে ধরতে পারলে জীবন গড়ে উঠে সম্মান ও সুখের নিকেতন রুপে। কিন্তু দেখা যায়, মানবজাতি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের ব্যাপারে বড় বেশি ঔদাসীন। পুরো গা ছাড়া ভাব। আমাদের ভেতর সময়ের মূল্যায়ণ নেই। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সা. বলেন- ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে যে দুটোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে সুস্থতা ও অবসর তথা সময়’।(বোখারি ৬৪১২, তিরমিজি ২৩০৪)।
সময়কে গুরুত্ব দেবার ব্যাপারে আরেকটি হাদিসের কথা আরো রঙ্গিনময় হয়ে ফুটে উঠে। রাসুল সা. এক সাহাবীকে জীবন সম্পর্কে এভাবে উপদেশ দিয়েছেন যে, ‘পাঁচটি বিষয়কে অপর পাঁচটি বিষয়ের আগে মূল্য দাও! বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দারিদ্রের আগে ধণাট্যাকে, ব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে হায়াতকে(আল মুসতাদরাক ৭৮৪৬)।
আল্লাহ পাক মাটির এ পৃথিবীতে মানবজাতিকে নির্ধারিত হায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন। মানবের বেঁচে থাকা হায়াতের নাম হলো তার জীবনের সময়। বেঁচে থাকার জীবনে সময়ের ভেতরে জীবন করতে হবে সাফল্যমন্ডিত।নিজেকে উপযুক্ত বানাতে হবে আপন রবের দরবারে। মৃত্যুর পর জিজ্ঞাসাবাদের দিনে কোন মানুষ যদি আল্লাহর কাছে ধরা পড়ে যায়, তাহলে সে হবে পাপী ও জাহান্নামী। আমাদের কাছে  অর্পিত নির্ধারিত সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবো। রাসুল সা. বলেন- ‘পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত না হওয়া পর্যন্ত বিচার দিবসে কোন মানুষ তার পা নাড়াতে পারবে না। ১.তার হায়াত সম্পর্কে তা কোথায় উড়িয়েছে ২. তার যৌবন সম্পর্কে তা কোথায় মলিন করেছে ৩. তার সম্পদ সম্পর্কে ক. তা কোথায় থেকে আয় করেছে খ. কোথায় খরচ করেছে ৫. সে যা জেনেছে সে অনুযায়ী কতটা আমল করেছে’। তিরমিজি ২৪১৬।
পৃথিবীর মাটিতে সফল ও সুন্দর জীবন যাপনের জন্য পূর্ব শর্ত হলো সময়কে গুরুত্ব দেওয়া। সময় অনুযায়ী সব কাজ করা। অবহেলা প্রহসনে সময় অতিক্রান্ত না করা। জগত বিখ্যাত প্রশংসনীয় ও পৃথিবীতে সত্য প্রতিষ্ঠার মোড়লরা সময়ের গুরুত্ব দিয়েছেন যারপরনাই। তারা সময়কে উপলব্ধি করেছে হৃদয়মর্মে।
উমর রা. বলতেন- হে মাবুদ, আমরা সময়ের বরকত ও কল্যাণময় অংশটুকু লাভের আবেদন করছি।
ইবনে উমর বলতেন- তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের অপেক্ষা করো না এবং সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। বোখারি ৬৪১৬।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলতেন, আমি ঐ দিনের চেয়ে অন্য কোন বস্তুর উপর অধিক অনুতপ্ত হয় না, যে দিনটি আমার জীবন থেকে হ্রাস পেল অথচ তাতে কোন নেক আমল হল না।
পৃথিবীর বড় বড় সফল পন্ডিতগণ সময়ের কদর করে বিশ্ব বিখ্যাত প্রতিকৃতি হয়েছেন। তারা সময়কে নিয়ে গভীর করে ভেবেছে। সময়কে কাজে লাগিয়েছে। তাদের চোখে সময় ধরা দিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তবে গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক। বাংলার কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদ বলেন- সময় নেতা তৈরী করে। মার্কিন রাজনীতিবীদ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কালিন বলেন- হারিয়ে যাওয়া সময় কখনও ফিরে আসে না। রুশ ঔপন্যাসিক লিও টলস্টয় বলেন- সবচেয়ে শক্তিশালী দুই যোদ্ধা হচ্ছে সময় ও ধৈর্য।
সময় হলো সোনার চেয়ে দামী। পৃথিবী শ্রেষ্ট অমূল্য সম্পদ। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময় তার আপন গতিতে বহমান। সময়ের আছে নিজস্ব বক্তব্য ও মানবের প্রতি ভালবাসার টান। সময়ের বক্তব্য হলো- আল্লাম সুয়ূতী জামাউল জাওয়াকে রাসুলের একটি হাদিস উল্লেখ করেন। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দিন এই বলে ঘোষণা করতে থাকে যে, ‘যদি কেউ কোন ভাল কাজ করতে চায় তাহলে যেন সে তা করে নেই। কেননা আমি কিন্তু আর ফিরে আসবো না। আমি ধনী দরিদ্র, ফকির মিসকিন, রাজা প্রজা, সকলের জন্য সমান। আমি বড় নিষ্ঠুর। আমি কারো প্রতি সদয় ব্যবহার করতে শিখেনি। তবে আমার সঙ্গে যে সদ্ব্যবহার করে সে কখনো বঞ্চিত  হবে না’।
সময় হচ্ছে সব সম্পদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আমাদেরকে সফল হতে হলে সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সময়কে ধারণ করতে হবে। সময়কে ধারণ করতে না পারলে গর্ভবতী হয় না কোন রমণী। বাগানে আসে না ভ্রমর। জমীনে আসে না ফসল। সুতরাং আমাদেরকে বিপ্লব সাধিত করতে হলে সময়কে ধারণ করতে হবে।

 

সর্বশেষ একটি কথাই মনে রাখতে হবে>>>>~সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড় ~।

আরো জীবন বিষয়ক তথ্য পেতে ঘুরে আসুন আমাদের ফেইসবুক পেজ এ--রকমারি শিক্ষা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Article End Ads