Header Ads Widget

মার্ক জাকারবার্গ যে ১০টি বই পড়ার পরামর্শ দেন



মার্ক জাকারবার্গ আধুতিক সমাজের এক কিংবদন্তী।
মার্ক জাকারবার্গকে চিনেন না কিংবা তার নাম শুনেন নি বর্তমান বিশ্বে এমন লোক খোঁজে পাওয়াই দুষ্কর হবে এটা প্রায় নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। ১৫০ কোটি মানুষের প্লাটফর্ম ফেইসবুক তাকে এনে দিয়েছে আকাশচুম্বী সাফল্য। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই জাকারবার্গ টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বছরের সেরা ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছেন। তাই মার্ক জাকারবার্গের জীবন, দর্শন কিংবা বক্তব্যের প্রতি রয়েছে কোটি মানুষের দৃষ্টিপাত। আজ চলুন আমরা জেনে নেই তেমনি একটি বিষয়, যেখানে মার্ক জাকারবার্গ নিজে ১০টি বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন সকলের জন্য।

দ্যা রেশনাল অপটিমিস্ট(The Reshnal Optimist)

বিখ্যাত ও সমালোচনায় পরিপূর্ণ বিজ্ঞান লেখক ম্যাট রিডলির এই বইটি প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে। সেখানে রিডলি চেষ্টা করেছেন এটা দেখানোর যে মানুষ নিত্যনতুন যে ধারনাগুলোর জন্ম দিচ্ছে সেগুলো সবার জন্যেই ভালো বা মঙ্গলকর। বিশেষ করে বাজার ব্যবস্থার সাথে মানবসভ্যতার উন্নতির যে বেশ গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং সেটা বজায় রাখা একমাত্র পুরো ব্যাপারটিকে সবার জন্যে খোলা রাখার মাধ্যমেই সম্ভব সেটাই দেখাতে চেষ্টা করেছেন তিনি। হোয়াই নেশনস ফেইল বইটির একেবারে বিপরীত তত্ত্ব দেওয়ায় দুটোর ভেতরে তুলনা করতেই এ বইটি পড়ার পরামর্শ দেন মার্ক জুকারবার্গ।

হোয়াই নেশনস ফেইল(Why Nation Fail)

২০১২ সালে এমআইটির দুই অর্থনীতিবিদ ডেরেন একমাগলু ও জেমস রবিনসন নিজেদের ১৫ বছরের গবেষণার ফসল হিসেবে হোয়াই নেশনস ফেইল বইটি প্রথম প্রকাশ করেন(মার্চ-২০)। মূলত একটি দেশ কেন ঠিকঠাকভাবে উন্নত হতে পারেনা, কেন একেকটি দেশ একেক রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, একেকরকম অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে- এসব নিয়েই মূলত আলোচনা করা হয় এই বইটিতে। বর্তমান তথা আজকের পৃথিবীতে যেমন রয়েছে উন্নতির শিখরে উঠে যাওয়া দেশ, তেমনি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার দারিদ্র্যতার কবলে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা কিছু দেশও। কোন দেশ অর্থনৈতিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে, কোনটা রাজনৈতিকভাবে। আর এসব কেন হচ্ছে তার কারণ বিশ্লেষনেই লেখা হয়েছে বইটি। বিশ্ব দারিদ্রের জন্মকে বুঝতে জুকারবার্গ বইটি পড়েছেন এবং সবাইকে পড়তে পরামর্শও দিয়েছেন। দেখে নিতে পারেন দি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত বইটির রিভিউ।

পোর্টফোলিওস অব দ্যা পুওর(Portfolios Of The Pure)

গবেষক ডারেল কলিন্স. জোনাথন মর্ডাক, স্টুয়ার্ট রুথফোর্ড ও অরলান্ডা রূথভেন টানা ১০ বছর বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের গলিব জনসংখ্যার ওপর কাজ এবং গবেষণা করেন এবং এ বইটি প্রকাশ করেন। এখানে দেখানো হয় যে দিনমজুরী নয়, টাকা জমানোর মতন পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান না থাকাটাই মানুষের দারিদ্রতার কারণ। বইটি পড়ে মার্ক জুকারবার্গ বিজনেস ইনসাইডারকে জানান, "এটা খুবই চমত্কার একটি তথ্য যে পৃথিবীর অর্ধেক, প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ, প্রতিদিন মাত্র ২.৫০ ডলারে দিন যাপন করে। ১ বিলিয়নের বেশি মানুষ জীবন যাপন করে মাত্র ১ ডলার বা তারচাইতেও কমে। আমি আশা করি এটি পড়লে আমরা সেই মানুষগুলোকে আরো একটু ভালো রাখার পথ খুঁজে পাব"।

জিনোম(Genom)

মার্ক জুকারবার্গের বই এর তালিকায় দ্বিতীয়বারের মতন একমাত্র যে লেখকটির নাম উঠে এসেছে তিনি হচ্ছেন ম্যাট রিডলি। ম্যাট রিডলির ১৯৯০ সালে প্রকাশিক বই জিনোম নিয়ে বেশ উচ্ছাস প্রকাশ করেন মার্ক। এ বইটিতে রিডলি জিন ও জেনেটিকসের উদ্ভাবনাকে প্রকাশ করেন। বইটি নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে মার্ক বলেন- "সমাজবিজ্ঞানের চাইতে জেনেটিকসের মাধ্যমেই মানবিকতার ইতিহাস বলাটাই এই বইটির লক্ষ্য"।

দ্যা থ্রি বডি প্রবলেম(The Tree-Body Problem)

২০০৮ সালে চীনে প্রথম এই বইটি প্রকাশিত হয়। এরপর গত বছরে এর ইংরেজী সংস্করনটি প্রকাশিত হয় যেটি কিনা ২০১৫ সালের হুগো অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। বইটিতে মাও সে তুং এর সময়কার সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কথা বলা হয়। বলা হয় এমন একটি গল্পের কথা যেখানে ভীনগ্রহবাসীরা পৃথিবী দখল করে নিতে চায় আর আক্রমণ করে বসে চীনে। ভারী ভারী বেশকিছু বইয়ের পর এটা পড়ে যথেষ্ট মজা পেয়েছেন বলে বিজনেস ইনসাইডারকে জানান মার্ক জুকারবার্গ।

দ্যা মুকাদ্দিমা(The Mukaddima)

১৩৭৭ সালে ইসলামিক ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের রচিত এই বইটি পরবর্তীতে দ্যা ইন্ট্রোডাকশন নামে প্রকাশ পেলেও মুকাদ্দিমা নামেই সবার কাছে বেশি পরিচিত। সবধরনের পিছুটান থেকে মুক্ত হয়ে এখানে মানবতাকে ঐতিহাসিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন খালদুন। এ বইটিতে ইতিহাসের প্রতি লেখকের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীকে বিবেচনা করে খালদুনকে সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসতত্ত্বের জনক হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়। “ ৭০০ বছরের উন্নতির ফলে যদিও অতীতের কিছু বিশ্বাস বর্তমানে ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো কেমন ছিল তা জানা আর দুটোকে এক করে দেখাটা এখনো অনেক মজার। “ জানান মার্ক জুকারবার্গ। এই বইটি সবারই পোড়া উচিত বলে তিনি বিজনেস ইনসাইডারকে জানান।

দ্যা নিউ জিম ক্রো(The New Gim Cro)

ওহিয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির আইনের প্রফেসর এবং উকিল মিশেল আলেক্সেন্ডার দ্যা নিউ জিম ক্রোতে এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে মাদক নিয়ে যুদ্ধের ফলাফল সবচাইতে বেশি ভোগ করছে কালো বর্ণের অহিংস পুরুষেরা। তাদেরকে জেলে পুরে নেওয়া হচ্ছে আর মুক্তি দেওয়ার পর দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বইটি নিয়ে মার্ক বলেন- “ আমি কিছুদিনের জন্যে অপরাধীদের প্রতি সুবিচার নিয়ে জানতে আগ্রহী হয়েছি এবং এই বইটি আমার খুবই বিশ্বস্ত কিছু মানুষ সুপারিশ করেছে।” বইটি নিয়ে দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিভিউটি পড়ে ফেলতে পারেন।

স্যাপিইনস(Sapiens)

জেরুজালেমে অবস্থিত হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ইউভাল নোয়া হারারির লেখা বিশ্বব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত হওয়া বই স্যাপিইনস প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। একানে লেখক শিকারী সমাজ থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের স্বশাসিত ইশ্বর অব্দি মানব সমাজের বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করেন। এ বইটি নিয়ে মার্ক জানান- "মুকাদ্দিমার মতনই, যেটা ১৩০০ শতকের একজন জ্ঞানীর কাছ থেকে পাওয়া ইতিহাস ছিল, স্যাপিইনসে বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকে একই রকম কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে"।


ক্রিয়েটিভিটি ইনক(Creativity Ink)

এড টাডমলের লেখা ক্রিয়েটিভিটি ইনক বইটি মূলত বিখ্যাত এনিমেশন মুভির অন্যতম স্রষ্টা পিক্সারের শুরুর গল্প নিয়ে লেখা। যেটা কিনা লিখেছেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এড ক্যাটমল। আরো অনেককিছুর সাথে ক্যাটমল এখানে নিজের কর্মীদের সৃজনশীলতাতে কোনরকম বাঁধা না দেওয়ার জন্যে সবাইকে পরামর্শ দিয়েছেন। পিক্সারের মতন কোম্পানি কি করে তৈরি হয়েছে আর বেড়ে উঠেছে সেটা জানতে নিজেকে প্রচন্ড উত্সাহী বলে এখানে প্রকাশ করেন মার্ক জুকারবার্গ। ফর্বস জানায়, ক্রিয়েটিভ লিডারশিপের ওপরে সবচাইতে নিখুত ও ভালো বই এটি।

দ্যা এন্ড অব পাওয়ার(The End Of Power)

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মশিঁয়ে নেইমের লেখা এই বইটিতে লেখক দেখাতে চেয়েছেন যে কি করে ধীরে ধীরে ঐতিহাসিক নানারকম ধাপে ক্ষমতা স্বৈরশাসক, সামরিক বাহিনী আর গুরুত্বপূর্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ব্যাক্তির হাতে চলে আসছে। চলে আসছে সাধারন মানুষের কাছে। বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে মার্ক লেখেন- "মানুষকে আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়ায় আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি।" ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এই বইটির রিভিউ পড়ে দেখতে পারেন আপনিও।
তথ্য সুত্রঃ বিজনেস ইনসাইডার ও প্রিয়।
তো চলুন বন্থুরা আমরা সবাই এই বইগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পড়ে ফেলি!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Article End Ads