দেজা ভ্যু কী এবং কেন হয়?-দেখেছি প্রথম তবুও মনে হয় দেখেছি আগে
রোহান একদিন যখন সিনেমা হলে ছবি দেখছিল তখন ছবিটির শেষ দৃশ্য যেখানে নায়ক খলনায়ককে মেরে ফেলে সেই দৃশ্যে এসে রোহানের বারবার মনে হচ্ছিল এটি সে আগেও দেখেছিল।
রোহান নিজেকে যতই বোঝাতে চাচ্ছিলাম যে এটি আগে দেখার কোন প্রশ্নই আসে না,তারপরেও রোহানের মনে হচ্ছিল এটি সে দেখেছিল।আর এই অনুভূতি একদমই প্রথম নয় রোহানের কাছে,এর আগেও অনেকবার রোহান এর সম্মুখীন হয়েছে।
যেমন,রোহানদের অঞ্চলে একবার একটি মাছ প্রদর্শনী মেলা বসেছিল(তাদের অঞ্চলে প্রথমবার মেলাটি বসেছিল) সেখানে রোহান একটি মাছের স্টল দেখার পর ওই স্টল ও স্টলটির দোকানদারকে খুব চেনা চেনা লাগছিল।প্রথম প্রথম যেদিন এই জিনিসটি অনুভব করতে পারল সেদিন সে অনেকের সাথে কথা বলেও জানতে পারেনি এটি কী বা কেন এটি হয়।
পরে একদিন কোন একটি খবরের কাগজ পড়তে পড়তে জানতে পারে এই অনুভূতির নাম হচ্ছে ‘দেজা ভ্যু’, ইংরেজীতে যার অর্থ হচ্ছে ‘ALREADY SEEN’,বাংলায় আমরা বলতে পারি ‘আগেই দেখা হয়েছে’। সহজে বলতে গেলে দেজা ভ্যু হচ্ছে কোন কিছুকে প্রথমবার দেখেই চেনা চেনা বা পরিচিত বলে মনে হওয়া যদিও সেটি আগে থেকে আমাদের পরিচিত হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।
এই কোন কিছুটা যে শুধু কোন জিনিস হতে হবে তাই নয়,হতে পারে কোন স্থান কিংবা জায়গা,কোন ব্যক্তি অথবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার কোন মুহূর্ত।
Photo by jaikishan patel on Unsplash |
দেজা ভ্যু কেন হয়?
দেজা ভ্যুর আসল কারণ জানতে গেলে গভীর ধাঁধায় পড়ে যেতে হবে।কারণ, দেজা ভ্যু হওয়ার আসল কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো একমত হতে পারেন নি।একেকজন একেকরকম কারণ দেখিয়েছেন দেজা ভ্যু সংঘটিত হওয়ার। সেগুলোর মধ্যে হতে কয়েকটি কারণ তুলে ধরছি আপনাদের জন্য:
১।স্বপ্ন সম্পর্কিত কারণ (স্বপ্নের খেলা)
দেজা ভ্যু হওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রথম যে ধারণার কথা আমরা তুলে ধরব সেটি হচ্ছে স্বপ্ন সম্পর্কিত বা স্বপ্নের খেলা।কিছু কিছু মানুষ বিশ্বাস করে থাকে যে,মানুষের মনে যে জিনিসটি নিয়ে সন্দেহ অনুভূত হয় যে সে সেই জিনিসটি আগে কোথাও দেখেছে অর্থাৎ তার দেজা ভ্যু হয় যে জিনিসটি বা দৃশ্য নিয়ে সেটি সে আগেই কোনো সময় স্বপ্নে দেখেছিল।
কিন্তু,আমরা জানি যে,মানুষ খুব কম স্বপ্নই মনে রাখতে পারে।আর তাই সকালে উঠে সেই স্বপ্নটি আর সে মনে রাখতে পারে না কিন্তু অবচেতন মনে ঠিকই সেই স্বপ্নটি সংরক্ষিত থেকে যায়।পরে সে যখন বাস্তবে সেই ঘটনা কিংবা জিনিসটির সামনাসামনি হয় তখন তার অবচেতন মন সেই স্বপ্নে দেখা স্মৃতিটিকে মনে করিয়ে দেয়।তখনই তার মনে হয় যে ওই জিনিসটি সে আগেই দেখেছে বা ওই ঘটনা আগেও ঘটেছে।
২।স্মৃতির অন্তরালে থেকে যায়
এখন যেটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি স্মৃতির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।এই ধারণায় বা ব্যাখ্যায় বলা হয়ে থাকে যে,যেই জিনিস,রাস্তা বা স্থান বা ঘটনা বা দৃশ্য সম্পর্কে দেজা ভ্যু হয় সেই জিনিস,রাস্তা বা স্থান বা ঘটনা তার দৃশ্য পূর্বেও মানুষ দেখে থাকে।কিন্তু অনেক সময়কাল ধরে আগে তা দেখার কারণে তা স্মৃতিতে পুরোপুরিভাবে থাকে না।কিন্তু অবচেতন মনে বা স্মৃতিতে তার একটা ছাপ থেকে যায়।
এর ফলে যখন সে পুনরায় সেই জিনিস বা স্থান বা ঘটনার সামনাসামনি হয় তখন স্মৃতির গভীর থেকে ওই পুরনো স্মৃতিও তার সামনে উপস্থিত হয়।ফলে তখন তার মনে হয় যে এটি আগেও ঘটেছে বা সে এটি আগেও দেখেছে।
এটি একটি ভালো ব্যাখ্যা হতে পারত কিন্তু খুব বেশি শারীরিক নয়।কারণ দেজা ভ্যুর অভিজ্ঞতা যাদের হয়েছে তাদের মধ্য বেশিরভাগই মানুষই জোর দিয়ে বলে পূর্বে বা আগে ওই জিনিস বা জায়গা বা ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই তাদের মাঝে।
৩।দোষ মস্তিষ্কের নাকি
এবারের ব্যাখ্যাটি মস্তিষ্কের উপর নির্ভর করে দেয়া। আমরা সবাই জানি যে, মস্তিষ্কের এক এক অংশ এক এক কাজ করে থাকে। দেখার কাজটি মস্তিষ্কের যেই অংশটি করে থাকে সেটি মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থান করে থাকে।এটি কোন কিছুকে দেখার পর সেটিকে ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে থাকে যার ফলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি আমরা কী কী দেখছি।দেজা ভ্যু কে মানসিক রোগের সাথে তুলনা করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
কোন কিছু দেখে সেটিকে ব্যাখ্যা করতে মস্তিষ্কের এই অংশটির খুব কম সময় লেগে থাকে,সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যেই এই কাজটি সম্পন্ন হয়ে থাকে।কিন্তু যদি কোন কারণে কোন কিছু দেখা আর ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করার এই ক্ষুদ্র সময়ে আমাদের মন সামান্য সময়ের জন্য বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় তাহলে দেজা ভ্যু সংঘঠিত হয়।
এর কারণ হচ্ছে একবার চোখ জিনিসটি বা ঘটনাটি দেখে, তারপর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। পরে যখন চোখ আবার সেই জিনিসটি বা ঘটনাটি দেখে এবং তা ব্যাখ্যা করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে তখন একটু আগে দেখার ঘটনাটাও মনে পড়ে যায়। তখন মনে হয় এটি আমি আগেও দেখেছি। কিন্তু সে আগে যে একটু আগেই তা মাথায় আসে না।ফলে মনে হয় অনেক আগেরকার ঘটনা এটি।
এই ব্যাখ্যাটি বা তথ্যটি মোটামুটি চলনসই বলা চলে।এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে দেজা ভ্যু সম্পর্কে। অনেকেই আবার অতিপ্রাকৃত ঘটনার সাথে দেজা ভ্যুর যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন।
দেজা ভ্যু হওয়া কি খারাপ?
অনেক বিশেষজ্ঞ দেজা ভ্যু কে মানসিক রোগের সাথে তুলনা করেছেন।তাদের তথ্য বিশ্লেষণ অনুযায়ী দেজা ভ্যু তাদেরই হয় থাকে যাদের কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে। কিন্তু এর পক্ষে তারা কোন স্পষ্ট প্রমাণ দার করাতে পারেন নি।পৃথিবীর প্রায় ৬০%-৭০% মানুষ দেজা ভ্যুর মুখোমুখি হয়।তাদের বেশিরভাগেরই কোন রকম মানসিক সমস্যা নেই।আর যারা দেজা ভ্যু এর সাথে অতিপ্রাকৃত ঘটনার সম্পর্কে খুঁজে পান তারাও কোন শক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। আর তাই স্পষ্ট করে বলা যায় না যে দেজা ভ্যু হওয়াটা খারাপ কিছু।
দেজা ভ্যুর যে সকল কারণ আমরা দেখতে পাই সেগুলো থেকে দেখা যায় যে এগুলো মস্তিষ্কের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। আর তাই এটিকে খারাপ বা ক্ষতিকর কিছু হিসেবে অভিহিত করা যায় না।পরবর্তীতে আমরা কিছু বিখ্যাত ব্যক্তির দেজা ভ্যু হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে পোষ্ট লিখব।ততদিন পর্যন্ত কমেন্ট বক্সে আপনাদের দেজা ভ্যু এর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে ফেলুন আমাদের সাথে!
আরো পড়ুনঃ
0 মন্তব্যসমূহ
আপনার মন্তব্য পেশ করুন...